রাজ্য সরকার দুর্গাপুজোর অনুদান দেওয়া শুরু করেছিল ২০১৮ সালে। প্রথমবার পুজো উদ্যোক্তাদের দেওয়া হয়েছিল ১০ হাজার টাকা। ২০১৯ সালে অনুদানের পরিমাণ বেড়ে হয় ২৫ হাজার টাকা। পরের বছর, করোনার সময়ে এক লাফে এই অনুদান বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করা হয়েছিল। এর পরের বছর ৬০ হাজার, এবং এই বছর অনুদান বাড়িয়ে করা হয়েছে ৮৫ হাজার টাকা। পুজো কমিটিগুলির সঙ্গে বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও বলেছেন, আগামী বছর থেকে ১ লাখ টাকা করে অনুদান দেওয়া হবে দুর্গাপুজোয়। স্বভাবতই খুশি পূজা কমিটিগুলি। কিন্তু এর মধ্যেই দুশ্চিন্তা বাড়ছে কিভাবে এই টাকা খরচ করবেন তাঁরা।
নিয়ম অনুযায়ী দূর্গাপুজোয় রাজ্য সরকার থেকে পাওয়া অনুদানের টাকা প্রতিমা, মণ্ডপ বা পুরোহিতের পিছনে খরচ করা যায় না। এমনকি দশকর্মার দোকানের বিলও এই টাকায় দেওয়া যাবে না। তাহলে কোথায় খরচ করতে পারবেন? আসুন এক ঝলকে জেনে নেওয়া যাক।
প্রথমে জেনে নেওয়া যাক, কিভাবে পাবেন এই অনুদান। নিয়ম অনুযায়ী এখন পুলিশের ‘আসান’ অ্যাপের মাধ্যমে পুজোর অনুদানের জন্য আবেদন করতে হয়। সেখানে একসঙ্গে সব রকম প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র পাওয়া যায়। প্রধান শর্ত হল, কমপক্ষে ১০ বছরের পুরোনো পুজো হতে হবে। এবার আসি আসল কথায়।
প্রথমদিকে পূজোর অনুদান নিয়ে এত কড়াকড়ি ছিল না। আবেদন করলে সহজেই মিলত অনুদান, এবং খুব একটা হিসেব নিকেশ জমা দিতে হতো না। কিন্তু রাজ্য সরকারের তরফে এই অনুদান দেওয়া নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে একাধিক মামলা হয়। সেই সময়ে রাজ্যে সরকার আদালতকে জানিয়েছিল, পুজো উদ্যোক্তাদের টাকা দেওয়া হচ্ছে ‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ’ প্রকল্পগুলির প্রচারের জন্য। পরে হাইকোর্ট কয়েকটি শর্ত চাপায় পুজোর অনুদান পাওয়া নিয়ে। যেমন, অনুদানের অর্থ ব্যয় সংক্রান্ত নথি হাই কোর্টে জমা দিতে হবে, সামাজিক দায়িত্ব পালনে এই টাকা খরচ করতে হবে। তাই পুজো কমিটিগুলি রাজ্য সরকারের পুজো অনুদান নিয়ে আর মণ্ডপ, প্রতিমা কেনার জন্য টাকা ব্যয় করতে পারে না। এমনকি ঢাকীর টাকাও দিতে পারে না। এক পুজো কর্তার দাবি, রাজ্য সরকার যত টাকার পরিমান বাড়াচ্ছে, ততই আমাদের চিন্তা বাড়ছে। তাঁর বক্তব্য, কোথায় খরচ করবো এতো টাকা? বস্ত্রদান, বা কাউকে অর্থ সাহায্য করলেও ৮৫ হাজার টাকা খরচ করা অসম্ভব। আবার ব্যবসায়ী বা সাধারণ মানুষ পুজোর চাঁদা দিতে চায় না এই যুক্তিতে যে সরকার আমাদের অনুদান দিচ্ছে। সবমিলিয়ে পুজোর অনুদান বাড়ায় বিপাকে পুজো কমিটিগুলি।